ব্যবহৃত মোবাইল কেনার সম্পূর্ণ গাইডলাইন (used mobile buy guidelines)
ব্যবহৃত মোবাইল কেনা একটি ভালো উপায় হতে পারে যদি আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে একটি ভালো ডিভাইস চান। তবে, এটি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে যদি আপনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা না করেন। এই গাইডলাইনটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
ধাপ ১: বিক্রেতা এবং প্ল্যাটফর্ম যাচাই করা
- পরিচিত বিক্রেতা: চেষ্টা করুন পরিচিত বা বিশ্বস্ত কারো কাছ থেকে মোবাইল কিনতে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যাচাইকৃত বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনুন।
- অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: Bikroy.com, Facebook Marketplace-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিক্রেতার রেটিং এবং রিভিউ দেখুন। যদি কোনো বিক্রেতার খারাপ রিভিউ থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে কেনা থেকে বিরত থাকুন।
- সরাসরি কেনা: অনলাইনে অর্ডার করার পরিবর্তে বিক্রেতার সাথে সরাসরি দেখা করে মোবাইলটি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করা সবচেয়ে ভালো।
ধাপ ২: মোবাইলের বাহ্যিক অবস্থা পরীক্ষা করা
- বডি এবং স্ক্রিন: মোবাইলের বডিতে কোনো বড় ধরনের স্ক্র্যাচ, ভাঙা অংশ বা ডেন্ট আছে কিনা দেখুন। স্ক্রিনে কোনো ফাটল বা গভীর দাগ আছে কিনা তা ভালো করে পরীক্ষা করুন।
- পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটন: প্রতিটি বাটন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। বাটনগুলো চাপার পর কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখুন।
- পোর্টস: চার্জিং পোর্ট, হেডফোন জ্যাক এবং অন্যান্য পোর্টগুলো পরীক্ষা করুন। চার্জার লাগিয়ে দেখুন চার্জ হচ্ছে কিনা। হেডফোন লাগিয়ে শব্দ শোনা যায় কিনা পরীক্ষা করুন।
- ক্যামেরা গ্লাস: ক্যামেরার লেন্সের গ্লাসটি পরিষ্কার আছে কিনা এবং এতে কোনো স্ক্র্যাচ আছে কিনা তা দেখুন।
ধাপ ৩: মোবাইলের অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা পরীক্ষা করা
- ডিসপ্লে এবং টাচ:
- ডিসপ্লেতে কোনো ডেড পিক্সেল (কালো বা রঙিন বিন্দু) আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। একটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে এটি সহজে বোঝা যায়।
- টাচ স্ক্রিনটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। একটি অ্যাপ আইকন স্ক্রিনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টেনে নিয়ে যান এবং দেখুন কোথাও টাচ কাজ করছে না কিনা।
- ক্যামেরা:
- সামনের এবং পিছনের উভয় ক্যামেরা দিয়ে ছবি এবং ভিডিও তুলে দেখুন।
- ফ্ল্যাশ লাইট কাজ করছে কিনা দেখুন।
- ক্যামেরা ফোকাস ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- ব্যাটারি:
- সেটিংস-এ গিয়ে ব্যাটারির স্বাস্থ্য (Battery Health) পরীক্ষা করুন (আইফোনের ক্ষেত্রে)। অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে, কিছু অ্যাপ ব্যবহার করে বা বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে ব্যাটারির অবস্থা জেনে নিন।
- মোবাইলটি কিছুক্ষণ ব্যবহার করে দেখুন ব্যাটারি দ্রুত শেষ হচ্ছে কিনা।
- সাউন্ড:
- কল করে দেখুন স্পিকার এবং মাইক্রোফোন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।
- গান চালিয়ে দেখুন লাউডস্পিকার থেকে শব্দ ঠিকঠাক আসছে কিনা।
- কল রিংটোন এবং নোটিফিকেশন সাউন্ড বাজিয়ে দেখুন।
- সিম কার্ড এবং নেটওয়ার্ক:
- আপনার নিজের সিম কার্ড দিয়ে কল করে দেখুন এবং ডেটা ব্যবহার করে দেখুন।
- ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ সংযোগ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- স্টোরেজ এবং পারফরম্যান্স:
- মোবাইলের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি এবং ব্যবহৃত স্টোরেজ যাচাই করুন।
- কিছু ভারী অ্যাপ বা গেম চালিয়ে দেখুন মোবাইলটি ল্যাগ করছে কিনা।
- ফোনের সেটিংস থেকে RAM এবং প্রসেসর সংক্রান্ত তথ্য দেখুন।
ধাপ ৪: অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- বিল এবং বক্স: বিক্রেতার কাছে মোবাইলের আসল বক্স এবং ক্যাশ মেমো বা বিল আছে কিনা তা জিজ্ঞেস করুন। যদি থাকে, তাহলে তা নকল কিনা যাচাই করে নিন। বিল থাকলে বোঝা যায় মোবাইলটি চুরি করা নয়।
- ওয়ারেন্টি: যদি মোবাইলের ওয়ারেন্টি এখনো থাকে, তাহলে সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে নিন।
- আইএমইআই (IMEI) নম্বর: ফোনের সেটিংস থেকে বা
*#06#
ডায়াল করে আইএমইআই নম্বরটি যাচাই করুন। এটি মোবাইলের বক্স বা বিলে থাকা আইএমইআই নম্বরের সাথে মিলছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। - দাম: বাজারের সাথে তুলনা করে মোবাইলের দাম ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। খুব কম দামে কোনো মোবাইল বিক্রি হলে সন্দেহজনক হতে পারে।
- রিসেট: মোবাইল কেনার আগে বিক্রেতাকে দিয়ে ফ্যাক্টরি রিসেট করিয়ে নিন যাতে আগের ব্যবহারকারীর কোনো ডেটা না থাকে।
শেষ কথা:
ব্যবহৃত মোবাইল কেনার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রতিটি ধাপ যত্ন সহকারে অনুসরণ করুন। যদি কোনো কিছুতে সন্দেহ হয়, তাহলে সেই মোবাইলটি না কেনাই ভালো। উপরের গাইডলাইনটি অনুসরণ করলে আপনি তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে একটি ভালো ব্যবহৃত মোবাইল কিনতে পারবেন।
ব্যবহৃত মোবাইল কেনার সেরা মার্কেটপ্লেস: ঢাকা ও অনলাইনে নির্ভরযোগ্য স্থান
বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল কেনার জন্য বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য মার্কেটপ্লেস রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ এবং সুবিধা অনুযায়ী অনলাইন বা অফলাইন মার্কেট বেছে নিতে পারেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস (Online Marketplaces)
অনলাইনে ব্যবহৃত মোবাইল কেনার সুবিধা হলো, আপনি ঘরে বসেই বিভিন্ন ফোনের দাম এবং কন্ডিশন তুলনা করতে পারেন। তবে এখানে বিক্রেতার সাথে সরাসরি দেখা করে পণ্য যাচাই করে নেওয়া জরুরি।
Bikroy.com: এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাসিফায়েড ওয়েবসাইট। এখানে আপনি ব্যক্তি বা দোকানের কাছ থেকে সরাসরি ব্যবহৃত মোবাইল কিনতে পারবেন। বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে সরাসরি দেখা করে ফোনটি পরীক্ষা করে নেওয়া নিরাপদ।
- Daraz.com.bd: দারাজ একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হলেও, তাদের “Pre-Owned” বা ব্যবহৃত ফোনের একটি বিভাগ রয়েছে। এখানে বিক্রেতাদের রেটিং এবং রিভিউ দেখে কেনা যেতে পারে। তবে পণ্য হাতে পেলে ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- SWAP.com.bd: এটি একটি Re-commerce প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনা-বেচার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে পণ্যের মান যাচাই করা হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে সীমিত ওয়ারেন্টিও দেওয়া হয়।
- Facebook Marketplace এবং বিভিন্ন গ্রুপ: ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এবং ব্যবহৃত ফোন কেনা-বেচার জন্য তৈরি বিভিন্ন গ্রুপও বেশ জনপ্রিয়। এখানে সরাসরি বিক্রেতার সাথে কথা বলে লেনদেন করা যায়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা খুব জরুরি।
অফলাইন মার্কেট (Physical Marketplaces)
ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে কিছু নির্দিষ্ট মার্কেট রয়েছে যেখানে ব্যবহৃত মোবাইল কেনা-বেচার জন্য প্রচুর দোকান পাওয়া যায়। এখানে সরাসরি হাতে নিয়ে ফোনটি পরীক্ষা করে কেনার সুযোগ থাকে।
- বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স (ঢাকা): এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় মোবাইল মার্কেট। এখানে নতুন এবং পুরাতন উভয় ধরনের ফোনের অনেক দোকান আছে। বিশেষ করে মোবাইল সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধানও এখানে পাওয়া যায়।
- মোতালেব প্লাজা (ঢাকা): ঢাকার হাতিরপুলে অবস্থিত এই মার্কেটটি ব্যবহৃত মোবাইল এবং অ্যাক্সেসরিজের জন্য সুপরিচিত। এখানে অনেক দোকান আছে, তাই আপনি বিভিন্ন দোকানের দাম তুলনা করে ভালো ডিল পেতে পারেন।
- যমুনা ফিউচার পার্ক (ঢাকা): এখানেও মোবাইল ফোনের অনেক বড় দোকান রয়েছে, যারা ব্যবহৃত বা সার্টিফাইড সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন বিক্রি করে। এই দোকানগুলো সাধারণত কিছুটা নির্ভরযোগ্য হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
যেকোনো মার্কেট থেকে কেনাকাটার সময়, বিক্রেতাকে অবশ্যই মোবাইলের আসল বক্স, চার্জার, এবং ক্রয়ের রশিদ আছে কিনা জিজ্ঞাসা করুন। যত বেশি ডকুমেন্টেশন থাকবে, ফোনটির বৈধতা তত বেশি নিশ্চিত হবে। সরাসরি বিক্রেতার সাথে দেখা করার সময় জনসমাগমপূর্ণ কোনো স্থানে দেখা করুন এবং উপরে উল্লিখিত টিপসগুলো অনুসরণ করে ফোনটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন।
Facebook monetization ২০২৫ সালের নতুন নিয়ম: ফেসবুক থেকে আয় করার নতুন উপায়